হাইমচরের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে উপজেলাবাসীর স্বপ্নের অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপিত হচ্ছে খুব শীঘ্রই। যা ২০১৮ সালের ১ এপ্রিল হাইমচরে অনুষ্ঠিত ৬ষ্ঠ জাতীয় কমডেকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি এ অঞ্চলের নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া ও মনোরম পরিবেশ দেখে মুগ্ধ হয়ে এ ঘোষণা দেন। সেই সাথে অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য অনুমোদনও করেন ৮,১০২ একর খাস জমি। যা অল্প কিছুদিনের মধ্যেই হাইমচর উপজেলা ভূমি অফিস বেজা কর্তৃপক্ষকে দলিলসহ হস্তান্তর করা হবে।
এদিকে হাইমচরে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় খাসজমি বন্দোবস্তে প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন করার খবরে চাঁদপুর সদর ও হাইমচর উপজেলার সর্বত্র আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। শুধু এ দু’ উপজেলা-ই নয়, চাঁদপুর জেলার সর্বত্রই বলতে গেলে মানুষ আনন্দে উচ্ছ¡াস প্রকাশ করেছে।
এর জন্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে হাইমচরসহ চাঁদপুর জেলাবাসী। একই সাথে এ বিশাল প্রাপ্তির পেছনে যিনি চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করছেন চাঁদপুরের গর্ব শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপির প্রতিও হাইমচরবাসী অশেষ কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি’র আন্তরিক প্রচেষ্টায় হাইমচরে অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ শুরু হচ্ছে খুব শীঘ্রই। ইতোমধ্যে এ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার লক্ষে ৮ হাজার ১০২ একর খাসজমি বন্দোবস্তে অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরই ধারাবাহিকতায় হাইমচর উপজেলার ওই খাস জমি বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) অনুক‚লে শর্তসাপেক্ষে দীর্ঘমেয়াদী বন্দোবস্ত দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়। ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব মাকছুদুর রহমান পাটওয়ারী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ তথ্য জানা গেছে।
ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) আবেদন এবং তার প্রস্তাব ও সুপারিশের প্রেক্ষিতে হাইমচর উপজেলাধীন ১ নম্বর খতিয়ানভূক্ত চরহাইমচর, চরকোড়ালিয়া, চরপক্ষিদিয়া, নিউচর, মিয়ারচর, চরবৈরাগী, দিয়ারা, তাজপুর, সোনাপুর, চররাও, ঈশানবালা, চরগাজীপুর-মনিপুর, মোলায়েমবাড়ী, চরহাসাদী, বাজেয়াপ্তি, চরগাজীপুর-মনিপুর, গাজীপুর-কুতুবপুর ও মনিপুর মৌজাভূক্ত বিভিন্ন দাগের সর্বমোট ৮ হাজার ১শ’ ২ দশমিক ০৫ জমি ধার্য্যকৃত ৩ হাজার ৮শ’ ৩৯ কোটি ৩৯ লাখ ৯৪ হাজার ৫শ’ ৪০ টাকা সেলামির পরিবর্তে ১০ লাখ ১ হাজার ১শ’ টাকা প্রতীকি মূল্যে অকৃষি খাসজমি ব্যবস্থাপনা ও বন্দোবস্ত নীতিমালা অনুযায়ী ব্যতিক্রম সাপেক্ষে বন্দোবস্ত প্রদানের প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন প্রদান করেন। এর প্রেক্ষিতে উল্লেখিত জমি বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের অনুক‚লে শর্তসাপেক্ষে সরকার দীর্ঘমেয়াদী বন্দোবস্ত প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
ওই সময়ের ভূমি সচিব মাকছুদুর রহমান পাটওয়ারী ফেইসবুক স্ট্যাটাসে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সানুগ্রহ অনুমোদন দিয়েছেন। চাঁদপুর জেলার সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এটি সুদূরপ্রসারী, অত্যন্ত দূরদর্শী, ইতিবাচক পরিবর্তন বয়ে আনবে। জীবন-যাপন ব্যবস্থায় আনবে ব্যাপক এবং অকল্পনীয় পরিবর্তন। উন্নত জীবনের ছোঁয়া এবং সাধারণ মানুষের ভাগ্যের আমূল পরিবর্তনের বীজ বপন করায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা এবং কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
তিনি আরো উল্লেখ করেন, ৮ হাজার ১শ’ ২ একর জমির বাজার মূল্যও বিশাল। ৩ হাজার ৮শ’ ৩৯ কোটি ৩৯ লক্ষ ৯৪ হাজার ৫শ’ ৪০ টাকা। তবে রাষ্ট্রের সামগ্রিক উন্নয়নের দিক বিবেচনা করে মাত্র ১০ লাখ ১ হাজার ১শ’ ১ টাকায় প্রতীকী মূল্যে দীর্ঘমেয়াদী বন্দোবস্ত প্রদানের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনুগ্রহ করে অনুমোদন দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাইমচরে বাংলাদেশ স্কাউটসের ৬ষ্ঠ জাতীয় কমডেকার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণ দিতে গিয়ে এখানে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার ঘোষণা দেন। ওই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি হেলিকপ্টারে করে আসার সময় এখানকার জায়গাগুলো দেখেছি। হাইমচর অঞ্চলটি পছন্দ হয়েছে। এখানে আমরা একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলবো। এখানকার মানুষ কাজের সুযোগ পাবে, সঙ্গে একটি পর্যটন কেন্দ্র হবে, নৌ-ভ্রমণের জন্য স্পট বানানো হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিানা সার্বিক মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন চান। তাই তিনি গ্রামের মতো দুর্গম অঞ্চলে অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণের কাজ হাতে নিয়েছেন।
মধ্যচরের ভূখÐটি হাইমচর উপজেলার মূল ভূখÐ হতে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন যা অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ। এখানে অর্থনৈতিক অঞ্চল হলে জীবনমানসহ সকল পর্যায়ে সার্বিক উন্নয়নের প্রতিফলন ঘটবে।
ধারনা করা হয়, এখানে দৃশ্যমান এমন উন্নয়ন হবে যা কল্পনার বাইরে। এ ভাসমান চর হয়ে যাবে শহর, এখানে অর্থনৈতিক অঞ্চলের সাথে সাথে নদী বাঁধ নির্মানসহ শিল্প, থানা, হাসপাতালসহ বড় ব্রিজ নির্মাণ করা হবে।
২০২০ সালের ১১ ডিসেম্বর প্রস্তাবিত এ অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শনে আসেন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী।
পরিদর্শনকালে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাইমচরে আগমন করে অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘোষণা দিয়েছেন। তারই ধারাবাহিকতায় ৮ হাজার ১শ’ ২ একর জমির উপর অর্থনৈতিক অঞ্চলের অনুমোদন দিয়েছেন তিনি।
হাইমচর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট রিগ্যান চাকমা জানান, অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার যাবতীয় কার্যক্রম ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল (বেজা) কর্তৃপক্ষ খুব শীঘ্রই হাইমচরে আসবেন এবং আমরা ভূমি অফিস থেকে দলিলসহ ভূমি রেজিষ্ট্রির ব্যাপারে প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ গ্রহণ করবো।
হাইমচরে অর্থনৈতিক অঞ্চল অনুমোদন হওয়ায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং শিক্ষামন্ত্রী ডা.দীপু মনি এমপির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে হাইমচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নূর হোসেন পাটওয়ারী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে হাইমচর উপজেলাসহ, এ অঞ্চলের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাইমচর উপজেলায় অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘোষণা করেন। হাইমচর উপজেলার ৮,১০২ একর জমিতে চাঁদপুর অর্থনৈতিক অঞ্চল-২ (হাইমচর) (ঊপড়হড়সরপ তড়হব) প্রতিষ্ঠার লক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সানুগ্রহে অনুমোদন দিয়েছেন। এতে করে হাইমচর উপজেলা তথা চাঁদপুর জেলাসহ আশপাশের জেলা, উপজেলাগুলোতেও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ইতিবাচক পরিবর্তন হবে। জীবনমানে আনবে ব্যাপক এবং অকল্পনীয় পরিবর্তন। মহামারী করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির কারনে অর্থনৈতিক অঞ্চলের কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছে না। তবে, খুব শীঘ্রই বেজা কর্তৃপক্ষ হাইমচর আসবেন এবং কাজ শুরুর সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করবেন বলে আশা রাখছি।
তিনি বলেন, এ সকল উন্নয়নমূখি কর্মকাÐে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে উন্নত সিঁড়িতে দাঁড়িয়েছি। এজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রাণঢালা অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। সাথে সাথে চাঁদপুর ও হাইমচরের উন্নয়নের রূপকার শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি’র প্রতিও শ্রদ্ধাভরে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
শিরোনাম ও ইন্ট্রæডাক্টরী : ১। হাইমচর উপজেলার মাঝের চরে ৮ হাজার ১০২ একর জমির উপর স্থাপিত হচ্ছে অর্থনৈতিক অঞ্চল। ২। এ অর্থনৈতিক অঞ্চলের চতুর্দিকে নদী প্রবাহমান থাকবে। ৩। সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুতের সংযোগ স্থাপন করা হবে। ৪। প্রথমে হাসপাতাল নির্মাণ, শিল্পাঞ্চল থানা, সরকারি রেস্ট হাউজসহ অর্থনৈতিক অঞ্চলের সাথে সাথে নদীতে বাঁধ নির্মাণ ও বড় বড় ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। ৫। মধ্যচরে অর্থনৈতিক অঞ্চল টেকসই করার লক্ষে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধিনে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা ব্যায়ে মেঘনা রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হবে।