চাঁদপুর জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভা ১২ জুলাই সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশের সভাপতিত্বে ভার্চুয়ালিভাবে অনুষ্ঠিত হয়। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অসীম চন্দ্র বনিকের সঞ্চালনায় সভায় চাঁদপুর জেলার করোনা পরিস্থিতিসহ আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ বিপিএম (বার)সহ জেলার সকল সরকারি দফতরের কর্মকর্তাগণ ভার্চুয়ালিভাবে যুক্ত ছিলেন।
সভায় করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে পৌর, উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি গঠন করে জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদেরকে তত্ত¡াবধায়নের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। সেই সাথে আসন্ন ঈদ-উল-আজহা উপলক্ষে পশুর হাট বিষয়ে এবং গৃহহীন ও ভূমিহীন পুনর্বাসনে নির্মিত ঘর বিষয়ে আলোচনা হয়। জেলা প্রশাসক করোনা অতিমারিতে সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদের গরীব-দুস্থদের ত্রাণ সাহায্য বিতরণের অনুরোধ জানান।
জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, জেলায় করোনা পরিস্থিতি যেভাবে উন্নতি হওয়ার কথা ছিলো, তা হয়নি। বরং চাঁদপুর জেলায় করোনা সনাক্তের হার বাড়ছে, মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। তিনি বলেন, মানুষকে আরো সচেতন হতে হবে।
তিনি বলেন, করোনা সংক্রমণরোধে আমরা আরোও একটি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। সেটি হচ্ছে- জেলার প্রতিটি ইউনিয়নে একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছি। এ কমিটির সভাপতি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। আর সদস্য হিসেবে মেম্বার, স্কুল শিক্ষক, মসজিদের ইমাম, বøক সুপারভাইজার, হেলথ প্রোভাইডার, বিট পুলিশের সমন্বয়ে কমিটি। কমিটি’র সদস্যরা যারা করোনা আক্রান্ত তাদের হোম আইসোলেশন নিশ্চিত করবে, স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য প্রচার-প্রচারণা চালাবে, টিকাদান কাজে সহায়তা করবে। সার্বিকভাবে তারা করোনা প্রতিরোধে সহায়তা করবে। প্রত্যেকটি ইউনিয়ন কমিটি সঠিকভাবে কাজ করছে কি না তা তদারকি করার জন্য জেলা পর্যায় থেকে ইউনিয়ন প্রতি একজন কর্মকর্তাকে নিযুক্ত করা হয়েছে। এভাবে আমরা পুরো জেলাকেই একটি মনিটরিংয়ের আওতায় নিয়ে আসতে চাই। যাতে করোনা প্রতিরোধে আমরা কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারি।
তিনি আরো বলেন, জেলা করোনা রোগী সংখ্যা বৃদ্ধির এই পরিস্থিতিতে স্থান সংকুলান না হওয়ার বিষয়ে আরেকটি হাসপাতাল নির্ধারণ করার পরিকল্পনা চলছে। সিভিল সার্জন ডা: সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, এটি করতে হলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি লাগে। তাদের অনুমতি নিয়ে এ বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ, মানুষ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে আসলে তাদেরকে সেবা দিতে হবে। সদর হাসপাতালে যে ক্যাপাসিটি আছে, তার বাইরে এখানে রোগী নিতে পারবে না। তাহলে রোগী বাড়লে বাকিরা কোথায় যাবে। সেজন্যই এ বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে আরেকটি হাসপাতাল ঠিক করতে চাই। কোরবানির হাট সম্পর্কে জেলা প্রশাসক বলেন, মঙ্গলবারের মধ্যেই পশুর হাট সম্পর্কে হয়তো সিদ্ধান্ত পাবো।
সিভিল সার্জন বলেন, ২৫০ শয্যার চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতাল করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল। এটির শয্যা বাড়ানো হবে। বর্তমানে করোনা ইউনিটে ৬০টি বেড রয়েছে। এ হাসপাতালে আরো ৩০টি বেড বাড়ানো হবে। পাশাপাশি, বেসরকারি কোনো একটি ডেডিকেটেড হাসপাতালের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হবে।
তিনি বলেন, আমরা চক্ষু হাসপাতালকে নিতে চেয়েছিলাম। চক্ষু হাসপাতালের দোতলায় বেড রেডি আছে। সেখানে প্রায় ৩০ জন রোগী ভর্তি করা যাবে। তাই এটিই প্রথম পছন্দ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রাজী থাকলে সেটিই হবে। আর যদি সেটি না হয়, তাহলে বিকল্প কোনো ফিল্ড হাসপাতাল করা যায় কি না, সেটি স্বাস্থ্য বিভাগের ডিজি মহোদয় দেখবেন।
চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ বিপিএম (বার) বলেন, জেলায় সা¤প্রতিককালে যে ৫টি খুন হয়েছে, সে ব্যাপারে আমাদের কয়েকটিতে অগ্রগতি আছে। তিনি করোনা বিষয়ে বলেন, মানুষ এখনো সচেতন হয়নি। সচেতন করতে হবে। তিনি বলেন, প্রায় প্রতিদিনই ৫/৬ জন করে পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে। তারপরও আমরা মনোবল হারাইনি।
চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র জিল্লুর রহমান বলেন, সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। আর এখন যেহেতু কমিটি হয়েছে, সেক্ষেত্রে অসুবিধা হবে না। সভায় হাইমচর উপজেলা চেয়ারম্যান নূর হোসেন পাটোয়ারী করোনা রোগীদের বহনের জন্য একটি অ্যাম্বুলেন্স এবং এর খরচ বহন করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি নাছির উদ্দীন আহমেদ বলেন, ২৫০ শয্যা হাসপাতালের সেবার মান বাড়াতে হবে। বিশেষ করে পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি। সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম দুলাল পাটোয়ারী বলেন, করোনা রোগীর বিষয়ে অ্যাম্বুলেন্স এবং দাফন কাফনে আমরা সাহায্য করবো।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, ডিডি এনএসআই শেখ আরমান, মুক্তিযোদ্ধা জেলা কমান্ডার এম এ ওয়াদুদ, জেনারেল হাসপাতাল তত্বাবধায়ক ডাঃ হাবিবউল, বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী, চাঁদপুর প্রেসক্লাব সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী প্রমুখ।