পাসপোর্ট ইস্যু ও নবায়নের ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশন (পরিচিতি ও তথ্য যাচাই প্রতিবেদন) বাদ যাচ্ছে। বর্তমানে এ কাজ করে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ বা এসবি। জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্মনিবন্ধন পাসপোর্ট ইস্যুর মূল ভিত্তি ধরা হয়। এ দুটি সঠিক থাকলে পাসপোর্ট দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো বাধা থাকার কথা নয়। সম্প্রতি উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এমন মতামত উঠে আসে। এর পরই এ নিয়ে কাজ শুরু করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ।
এ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পুলিশ প্রতিবেদনের অপেক্ষায় এ মুহূর্তে সারাদেশে ১৬ হাজার পাসপোর্ট ইস্যু ঝুলে আছে। প্রতিবেদন পেতে অনেক ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। অথচ অনেকের অসুস্থতাজনিত চিকিৎসা ও অন্যান্য কারণে দ্রুত দেশের বাইরে যেতে জরুরি পাসপোর্ট করার প্রয়োজন হয়ে পড়ে।
এ অবস্থা নিরসনের লক্ষ্যে আজ মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব ড. নাসিমুল গণির সভাপতিত্বে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় পাসপোর্ট জটিলতা নিরসনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রণয়ন করা হবে। উপদেষ্টা পরিষদের নির্দেশনার আলোকে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে এ-সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হবে। সভায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, পুলিশের বিশেষ শাখাসহ অন্যান্য বিভাগের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, পাসপোর্ট বা চাকরির ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশন মূলত একজন নাগরিকের তাঁর সামাজিক অবস্থান যাচাইয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। কিন্তু এ ভেরিফিকেশন এখন প্রশ্নের সম্মুখীন। পুলিশ ভেরিফিকেশনের নামে নাগরিকদের করা হচ্ছে হয়রানি। এমনকি সামান্যতম কারণেও অনেক সময় ঘুষ দিতে হচ্ছে।
পাসপোটের্র জন্য ভেরিফিকেশন করতে গেলে পুলিশের কাছে ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা দেওয়ার একটি অলিখিত নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ কাগজ-কলমে এ ধরনের টাকা দেওয়ার বিধান নেই। আবেদনকারীর তথ্যের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে পুলিশ ভেরিফিকেশনের প্রয়োজনীয়তা থাকলেও তথ্য সংগ্রহের প্রক্রিয়া চলাকালে নানা ধরনের ভোগান্তি, পক্ষপাতমূলক আচরণ এবং ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ এ পদ্ধতিকে কলুষিত করেছে। বিগত সময়ে সরকারগুলো পুলিশ ভেরিফিকেশনের নামে হয়রানি থেকে মুক্তি পেতে নানা উদ্যোগ নিলেও তা কার্যকর হয়নি।
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী বলেন, পুলিশ ভেরিফিকেশনের নামে হযরানি ও দুর্নীতি বন্ধ করা অত্যন্ত জরুরি। প্রার্থীর বা তার পরিবারের রাজনৈতিক পরিচিতি যাচাই করা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। বর্তমান ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া একটি বড় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। এটি বন্ধ করতে হবে। তিনি বলেন, কমিশন থেকে আমরা সুপারিশ করছি, চাকরি কিংবা অন্য সেবার ক্ষেত্রে পুলিশের ভেরিফিকেশন আর বাধ্যতামূলক না রাখতে। এটি কোথাও আর থাকবে না।
পুলিশ সংস্কার কমিশন গত ১৯ নভেম্বর জমা দেওয়া সুপারিশে জানায়, চাকরি ও পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা যাচাই বন্ধের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন সেদিন বলেন, ভেরিফিকেশনের নামে হয়রানি ও দুর্নীতি বন্ধ হওয়া জরুরি। প্রার্থীর বা তাঁর পরিবারের রাজনৈতিক পরিচিতি বিচার করা অযৌক্তিক।’